Monday, January 2, 2012

অনলাইনে অর্থ উপার্জন

অনলাইনে অর্থ উপার্জন

- আহসান হাবিব

ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে থেকে ঘরে বসেই টাকা উপার্জন সম্ভব। আপনিও সেটা করতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, সারা বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি প্রতি বছর তাদের প্রচারের জন্য ২৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সেই অর্থের কিছু অংশ এভাবে আপনার হাতে আসতেই পারে। এভাবে যে পরিমাণ টাকা উপার্জন করা সম্ভব তা বাংলাদেশের হিসেবে অস্বাভাবিক রকমের বেশি মনে হতে পারে। এক আমেরিকান ভদ্রলোক মাসে ১ লাখ ডলার আয়ের হিসেব দিয়েছেন। তবে এজন্য প্রথমে আপনাকে জানতে হবে কাজটি কতটা সহজ, কী করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে?

বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে ইনকাম

অনলাইনে আয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যা আলোচিত হচ্ছে তা হচ্ছে গুগলের অফংবহংব এবং অফড়িত্ফং বিজ্ঞাপন। অর্থাত্ আপনার ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপনের লিঙ্ক থাকবে, সেখানে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, গুগল বিশ্বের সেরা দশ ব্রান্ডের এক কোম্পানি। ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপন বাজারের অধিকাংশ তার একার দখলে। তারা যা করে তা হচ্ছে অন্যদের ওয়েব সাইট ব্যবহার করে। অর্থাত্ তারা কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নেবে তাদের প্রচারের জন্য। তাদের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে আপনার ওয়েব সাইটে। কেউ সেই বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে আপনিও টাকা পাবেন। অর্থাত্ আপনার হাতে টাকা আসার কয়েকটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ওয়েব সাইট থাকতে হবে। সেখানে প্রচুর পরিমাণ ভিজিটর আসতে হবে। তাদের বিজ্ঞাপনের লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে (অকারণে ক্লিক করা যাবে না, কারণ সেটা যাচাইয়েরও ব্যবস্থা আছে)। এই শর্তগুলো ঠিক থাকলে ঘরে টাকা আসতে শুরু করবে। অর্থাত্ যত বেশি ক্লিক তত বেশি টাকা।

একটি বিষয় তৈরি করুন

প্রথমে ওয়েবসাইট এবং ভিজিটরের বিষয়টি দেখা যাক। জানা মতে, সারা বিশ্বে ব্লগ রয়েছে প্রায় ১২শ’ কোটি যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে এই সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে। এই ভিড়ের মধ্যে আপনার ওয়েবসাইটে অন্যদের টেনে আনার জন্য ওয়েবসাইটে এমন কিছু থাকতে হবে যার আকর্ষণে প্রচুর পরিমাণ ভিজিটর সাইট ভিজিট করবেন। অর্থাত্ সাইটে গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণের জন্য উপকারী তথ্য থাকতে হবে। একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো, পর্নোগ্রাফি জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখায় মানুষ, তবে এ ধরনের সাইটে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেয়া যায় না। কাজেই আপনার প্রথম কাজ হবে, ভালো একটি বিষয় ঠিক করে ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা। এই ধাপ অতিক্রম না করে পরবর্তী ধাপে না যাওয়াই ভালো। অকারণে কিন্তু আপনার সাইটে হাজার হাজার ভিজিটর আসবে না।

টার্গেট ভিজিটর ঠিক করে নিন

কাদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করবেন অর্থাত্ আপনার টার্গেট গ্রুপ কারা সেটা আগেই ঠিক করে নিন। ব্রিটেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯০ ভাগ, আর বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহার করা মানুষের সংখ্যা শতকরা ১ ভাগের নিচে। বলা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা নগণ্য। বাংলাভাষীদের জন্য ওয়েবসাইট করলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ভিজিটর কম হবে। যদি আগে উল্লেখ করা ভদ্রলোকের মতো লাখো ডলার আয় করতে চান তাহলে সারা বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে যেতে হবে এবং এমন বিষয় থাকতে হবে যেখানে তারা আগ্রহ দেখাবেন। কোন সাইটগুলো মানুষ বেশি ব্যবহার করে, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য কী, ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিন। ওয়েবসাইটের সঙ্গে মিল রেখে যেহেতু বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী পেমেন্ট দেয়া হয়, সেহেতু ওয়েবসাইটের বিষয়টিও মাথায় রাখুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্রিকেটের জন্য ওয়েবসাইটে প্রতি ক্লিকে হয়তো কয়েক সেন্ট পাওয়া যাবে, যেখানে অর্থনীতি বিষয়ে সাইটে পাওয়া যাবে কয়েক ডলার।

চাই মানসম্মত ওয়েবসাইট

আপনি যদি ঘরে বসে বেশি আয় করতে চান তাহলে সেই মানের ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে হবে। এই কাজকে সহজে বলতেই পারেন কারণ একজন কৃষকের মতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে না। আপনার যদি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ছাড়াও আরও অনেক ধরনের আয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন : কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন সরাসরি আপনার সাইটে রাখতে পারেন টাকার বিনিময়ে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকাও অনলাইন বিজ্ঞাপনের কাছে হার মেনে বন্ধ হওয়ার মুখে। আপনি উদ্যোগ নিয়ে এদেশে আগে থেকেই নিজের অবস্থান ঠিক করে নিতে পারেন।

আয়ের অনেক সুযোগ আছে

বিজ্ঞাপনের বাইরেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বহুরকম আয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি কোনো পণ্যের রিভিউ লিখতে পারেন। দৈনিক একটি করে রিভিউ লিখে মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করা সম্ভব। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন—কম্পিউটার, ক্যামেরা অথবা গেম, সফটওয়্যার, মুভি ইত্যাদি বাজারে আসার আগেই অনলাইন রিভিউ দেখা যায়। যারা রিভিউ লেখেন তাদের টাকা দিয়ে এ কাজ করানো হয়। আপনি যে বিষয়ে রিভিউ লিখতে আগ্রহী সেই বিষয়ে অবশ্যই পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে এবং অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সরাসরি আপনার পক্ষে হয়তো কোনো কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। সে কারণে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ কাজে সহায়তা করে। তারা রিভিউ, ডাটা এন্ট্রি, সার্ভে ইত্যাদি কাজ সংগ্রহ করে দিতে পারে। এজন্য তাদের কিছু ফি দিতে হয়। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই এদের ঠিকানা পাবেন। তবে তারা সত্যিকারের সার্ভিস দেবে নাকি ফি হিসেবে দেয়া আপনার টাকা মেরে দেবে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ইন্টারনেটে ঠগবাজের কিন্তু অভাব নেই।

ধৈর্য ধরতে হবে

যে কোনো কাজেই সফলতা চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনি হয়তো প্রথম দিকে তেমন কাজ নাও পেতে পারেন। আবার কাজ পেলেও ইনকাম হয়তো তেমন হবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্যের সঙ্গে এগোতে হবে। পাশাপাশি নিজের যোগ্যতা অর্জনের জন্যও আপনাকে অভিজ্ঞ করে তুলতে কিছু সময় তো ব্যয় করতেই হবে। আবারও সেই আমেরিকান ভদ্রলোকের কথা মনে করিয়ে দেই। তিনি লাভের মুখ দেখেছিলেন আড়াই বছর পর। তাই, আপনি কাজে হাত দিয়ে রাতারাতি লাভের আশা করবেন না।

ইন্টারনেটেই সব পাবেন

ঘরে বসে ইন্টারনেটে টাকা আয় করবেন এজন্য অন্যকে টাকা দিয়ে সিডি কেনা, সেমিনারে যোগ দেয়া কিংবা ট্রেনিং করার প্রয়োজন নেই। তাদের কাছে সেটাই টাকা উপার্জনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। ইন্টারনেট সার্চ করুন, দুনিয়ায় এমন কোনো তথ্য নেই যা পাবেন না। তবে তার আগে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য কিছু প্রশিক্ষণ তো নিতেই হবে। আজকাল অনেকে ঘরে বসে টাকা আয়ের নানা কোর্স করানোর নামে প্রতারণাও করছে। এসব বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। মোটকথা, বাইরের জগত অনেক বড় এবং আমরা সহজেই তাতে অংশ নিতে পারি। নিজেরা লাভবান হতে পারি।
Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment